দেশের বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী কামাল আহমেদ। নিভৃতচারী এ শিল্পী প্রাণের বীণায় রবীন্দ্রনাথের গানকে ধারণ করে আছেন। শৈশব থেকেই গানের চর্চা করেছেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ছায়ানটে ওয়াহিদুলহকসহ গুণী শিল্পীদের সান্নিধ্য তার সঙ্গীত ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করে। একে একে প্রকাশিত হয় তার ৩০টি এ্যালবাম। সঙ্গীতের প্রতি নিঃশর্ত অনুরাগ তার পেশা নির্বাচনেও প্রভাব ফেলেছিল।
বিসিএসে ইনফর্মেশন ক্যাডার হয়ে যোগদান করেন বাংলাদেশ বেতারে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের উপ-মহাপরিচালক (প্রোগ্রাম) এবং তৎকালিন সময়ে- বহিঃবিশ্ব কার্যক্রমের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পেশা এবং নেশার পাশাপাশি নিজের স্বপ্নকেও ধরে রেখেছেন সমানভাবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মঞ্চেও সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকেন নন্দিত শিল্পী কামাল আহমেদ।
কণ্ঠশিল্পী কামাল আহমেদ তার সাবলীল ও সমৃদ্ধ কণ্ঠে সম্প্রতি ভারতীয় দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। ওপার বাংলায় টানা চার দিনের নানা আয়োজনে স্থানীয় দর্শক-শ্রোতাদের গান শুনিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। কলকাতার তারা টিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আজ সকালের আমন্ত্রণে’, ‘ন্যাশনাল পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যাল এ্যান্ড নিউ টাউন বুক ফেয়ার, কলকাতা’ এবং ‘কল্পতরুর মেলা’, ‘অল ইন্ডিয়া উইমেন কংগ্রেস’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন। এর মধ্যে গত বছরের শেষ দিনটিকে একটু বিশেষত্বই যেন দিয়েছে কামাল আহমেদের পরিবেশনা।
ওই দিন তারা টিভির সরাসরি সম্প্রচারিত ‘আজ সকালের আমন্ত্রণে’ অনুষ্ঠানে বরাবরের মতোই শিল্পীর পছন্দে ছিল রবীন্দ্রনাথের অল্পশ্রুত গানগুলো। ‘আমার সুরে লাগে তোমার হাসি যেমন ঢেউয়ে ঢেউয়ে রবির কিরণ দোলে আসি’ ভৈরবী রাগের এ গান দিয়ে শুরু হয় সকালের আয়োজন। প্রথম গানের পরপরই শ্রোতাদের টেলিফোনে আসতে থাকে ভাললাগার কথা।
এরপর একে একে শিল্পী গেয়ে চলেন ‘নিশি না পোহাতে’, ‘তোমায় গান শোনাব’, ‘আসা যাওয়ার পথের ধারে’, ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না’, ‘এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে’, ‘ডেকো না আমারে’, ‘যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা’, ‘সেই তো আমি চাই’, ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে’, ‘ভরা থাক স্মৃতি সুধায় বিদায়ের পাত্রখানি, মিলনের উৎসবে তায় ফিরায়ে দিও আনি’। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন বিশ্বরূপ রুদ্র। দর্শক-শ্রোতারা অনুষ্ঠানে ফোন করে জানিয়েছেন তাদের ভাললাগার অভিব্যক্তি; অনুরোধ করেছেন নানা গানের।
বছরের শেষদিনে হঠাৎ পাওয়া ধনের মতো এ শিল্পীর উপস্থিতি শুধু এপার বাংলা-ওপার বাংলাতেই নয়, চমৎকৃত করেছে প্রবাসী বাঙালীদেরও। অনুষ্ঠানে ফোন করে সেটা জানাতে ভোলেননি তারাও। ‘ন্যাশনাল পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যাল এ্যান্ড নিউ টাউন বুক ফেয়ার, কলকাতা’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সুরে সুরে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি, বিনিময়ে পেয়েছেন দর্শকদের বিপুল সাড়া।
পরপর দুদিনের এ মুখরতার রেশ শিল্পী ছড়িয়ে দিয়েছেন তৃতীয় দিনেও। অর্থাৎ ২ জানুয়ারি ‘কল্পতরুর মেলা’র আয়োজনে গান গেয়ে আবারও মুগ্ধ করেন দর্শকদের। পাশাপাশি শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত কামাল আহমেদের কণ্ঠের প্রশংসা করে বলেন, গান হয়ত অনেকেই করেন কিন্তু শিক্ষিত শিল্পীর দেখা মেলা ভার।
রবীন্দ্রনাথের গানে মন্থন করে শ্রোতাকুলকে মোহাবিষ্ট করতে পারেন কেবল শিক্ষিত শিল্পীরাই, আর কামাল আহমেদ তেমনই একজন। আকাশছোঁয়া প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব স্বাগতালক্ষ্মী স্বয়ং যখন বললেন যে, প্রতিটি গানই মুগ্ধ করেছে তাকে, তখন পরিবেশনা কেমন ছিল সে নিয়ে সংশয়ের আর কোন অবকাশই থাকে না। আত্মবিশ্বাসী শিল্পী কামাল আহমেদের গান বাছাইয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত বলেন, এ গানগুলো তার গাওয়া কিন্তু এগুলো যে আরও বহুবার দর্শকদের সামনে গাওয়া উচিত।
দেশে ফিরে আসার পরেও অনিন্দিত শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী মেইলে জানিয়েছেন তার ভাললাগার কথা। কথা ছিল এ তিন দিনের আয়োজন শেষেই দেশে ফিরবেন তিনি, কিন্তু শ্রোতাদের আবদার উপেক্ষা করতে পারেননি। ৪ জানুয়ারি ‘অল ইন্ডিয়া উইমেন কংগ্রেস’ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আবারও সঙ্গীত পরিবেশন করলেন। ভরিয়ে দিলেন গানে, পূর্ণ হলেন প্রেমে।
প্রকাশিত হয়েছে: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭
সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ