
হৃদয় আমার চায় যে দিতে, কেবল নিতে নয়……” রবীন্দ্রনাথের থেকে আমাদের প্রাপ্তির শেষ নেই। কিন্তু সেই পাওয়াকে আপনার করে অপরের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষমতা সকলের থাকেনা। কামাল আহমেদ কেবল একজন শিল্পিই নন, বরং রবীন্দ্রনাথের গান তার ধ্যান, জ্ঞান এবং গবেষণারও বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা, রবীন্দ্রনাথের গানকে সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয়ে যিনি বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি শিল্পী কামাল আহমেদ।
নিঃস্বার্থ প্রয়াসের নিরলস কাজ স্বীকৃতির আশায় থাকে না। তবে এমন কাজের স্বীকৃতি মিলবেই। সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় অবস্থিত মহারাজা বীরবিক্রম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্র সংস্কৃতি, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের গান প্রচার ও প্রসারে এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আধুনিক বাংলাদেশ বেতারের পথ পরিক্রমায় অনন্য সাধারণ ভূমিকা রাখার জন্য “অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্মৃতি স্মারক সম্মাননা” অর্জন করেন শিল্পী কামাল আহমেদ।
ত্রিপুরা হাইকমিশনের আমন্ত্রণে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২৬ মার্চ, ২০১৭ তারিখে আগরতলায় যান তিনি। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসকে উপজীব্য করে বস্তুনিষ্ঠ বক্তব্য প্রদান করেন এবং সংগীত পরিবেশন করেন।
পরবর্তী দিন, অর্থাৎ ২৭ মার্চ, ২০১৭ তারিখে মহারাজা বীরবিক্রম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত “অদ্বৈত মল্লবর্মণ ও সম্প্রীতি ভাবনা” শীর্ষক সেমিনারে অতিথি বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ পান কামাল আহমেদ। বক্তৃতা শেষে গান পরিবেশনের কথা থাকলেও সম্মাননা প্রদানের বিষয়ে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। বক্তৃতা, সম্মাননা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনার তিন পর্বের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে রীতিমতো বিস্মিত হন তিনি।
বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণের সাহিত্যকীর্তি, বাক্তিজীবন ও কর্ম, জীবনবোধ, সুগভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং সমকালীন প্রাসঙ্গিকতার বিষয়ও উপস্থাপিত হয় বক্তৃতায়।
১৮৯৯ সালের ২৭ মার্চ, সোমবার ত্রিপুরার বাঙ্গালির জন্য একটি বিশেষ দিন। ঐদিনে রাজার আমন্ত্রণে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম ত্রিপুরায় যান। মজার ব্যাপার হল ২০১৭ সালের ২৭ মার্চও ছিল সোমবার। এমন একটি দিনে এমন সম্মাননা পেয়ে রবীন্দ্রপ্রেমী কামাল আহমেদ বিস্ময়ে অভিভূত।
১৯৪৭ সালের ২৮ মার্চ মহারাজা বীরবিক্রম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এ ঐতিহ্যবাহী কলেজের ছাত্র ছিলেন। ২৭ মার্চ সেমিনারে এ কলেজের পরিচালনা কমিটির বাক্তিবর্গ এবং শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কামাল আহমেদের বক্তৃতা এবং সংগীত পরিবেশনায় মন্ত্রমুগ্ধ হন তারা। এমন একজনকে এত কাছে পেয়ে ছাত্রদের সামনে নিতে পারার লোভ তারা সংবরণ করলেন না।
অনুরোধ জানালেন কামাল আহমেদকে, ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের কথা ছাত্রদের সামনে তুলে ধরতে। কোন প্রস্তুতির বাহানা তিনি জানালেন না, ছকে বাঁধা সময় থেকেও বের করে নিলেন একটু সময়। কারন তরুণ প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কথা বলা তার বিশেষ আগ্রহ এবং উৎসাহের জায়গা। কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ২৮ মার্চে বক্তব্য শেষে রবীন্দ্রনাথের স্বাদেশ পর্যায়ের গান গেয়ে শোনান তিনি। প্রতিশ্রুতি দিতে হয় আবার যাওয়ার।
ত্রিপুরার দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মহারাজা বীরবিক্রম বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য গৌতম কুমার বসু সম্মাননা স্মারকটি প্রদান করেন। তিনি বলেন এমন মানুষকে এই সম্মাননা প্রদান করতে পেরে প্রকারান্তরে তারাই সম্মানিত বোধ করছেন। এ বিরল সম্মাননা কেবল তারই নয়, এ সম্মান গোটা বাংলাদেশের।
উল্লেখ্য, কামাল আহমেদ শুধু গানই নয় পেশাগত জীবনেও এই মানুষটি রেখেছেন সফলতার স্বাক্ষর। মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের ভূমিকা উদ্দীপিত করে তাকে। পেশা নির্বাচনে তাই ক্যাডার সার্ভিসের তথ্য ক্যাডারই ছিল তার প্রথম পছন্দ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতাকে নিয়ে রয়েছে তার নানান কাজ। এমন কি প্রথমবারের মত কোন বাঙালি মুক্তি সংগ্রামের দিশারী শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি সম্পূর্ণ অ্যালবাম প্রকাশ করেন। “মহাকাব্যের কবি” নামে এ অ্যালবামটি কলকাতার রাগা মিউজিক থেকে প্রকাশ করা হয়।
Source: unitednews24.com